লিখেছেন আব্দুল্লাহ শাহেদ ///
الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين نبينا محمد وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين أما بعد:
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মৃত্যু বরণের পূর্বেই কুরআন ও হাদীছের মাধ্যমে এই দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন। আল্লাহ্ বলেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمْ الْإِسْلَامَ دِينًا
“আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদাঃ ৩)
সুতরাং পবিত্র কুরআন ও রাসূলের সুন্নাতই হচ্ছে ইসলামী শরীয়তের ভিত্তিমূল। আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআন যেমন অহী তেমনি তাঁর রাসূলের হাদীছ অন্য এক প্রকার অহী। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের খেয়াল-খুশী মত কোন কথাই বলতেন না। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلا وَحْيٌ يُوحَى
“এবং তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। তা (কুরআন) অহী ছাড়া অন্য কিছু নয়, যা প্রত্যাদেশ হয়। (সূরা নাজমঃ ৩-৪)
সুতরাং অনুসরণের দিক থেকে হাদীছ কুরআনের মতই। হাদীছ ব্যতীত কোন মুসলিমের পক্ষে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। তাই মহান আল্লাহ্ কুরআনের অনেক স্থানেই রাসূলের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্র নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ্ ও তার রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ্ ও কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।” (সূরা নিসাঃ ৫৯)
আল্লাহ তায়া’লা বলেনঃ
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভালবাস তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ্ও তোমাদেরকে ভালবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ্ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।” (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ
فَلْيَحْذَرْ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“অতএব, যারা তাঁর নবীর (সাঃ) আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, ফিত্না (বিপর্যয়) তাদেরকে গ্রাস করবে অথবা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি তাদেরকে আক্রমণ করবে।” (সূরা নূরঃ ৬৩) আল্লাহ্ তায়া’লা আরো বলেন,
وَمَاَآتاَكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
“তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর। এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করেন, তা থেকে তোমরা বিরত থাক।” (সূরা হাশরঃ ৭) আল্লাহ্ আরও বলেন,
وَلَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُوْلِ اللَّهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الآخِرَ
“তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে, পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদের জন্য রাসূল (সাঃ)এর জীবনীতে এক সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে। (সূরা আহযাবঃ ২১) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
فَلا وَرَبِّكَ لا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجاً مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيماً
“অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবােেদর ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নেবে।” (সূরা নিসাঃ ৬৫)
এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও অসংখ্য হাদীছে উম্মতকে তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
“আমার পরে তোমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।” (আবু দাউদ, তিরমিজী, হাদীছটি সহীহ) রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় তৈরী করবে যা তার অন্তর্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী ও মুসলিম) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ
আমাকে কুরআন ও তারঅনুরূপ বস্তু দান করা হয়েছে। (আবু দাউদ, ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
إني تركت فيكم ما إن اعتصمتم به فلن تضلوا أبداً: كتاب الله وسنة نبيه
“আমি তোমাদের জন্য এমন দু’টি বিষয় রেখে যাচ্ছি যত দিন তোমরা তার অনুসরণ করবে ততদিন তোমরা গোমরাহ হবে না। একিট হচ্ছে আল্লাহর কিতাব আর অপরটি হচ্ছে তাঁর নবীর সুন্নাত। অত্র হাদীছের ভাষা থেকে বুঝা যাচ্ছে হাদীছকে বাদ দিয়ে কুরআন মানলে কিংবা কুরআন ছেড়ে দিয়ে শুধু হাদীছ মানা হলে সীরাতে মুস্তাকিম থেকে বহু দূরে সরে গিয়ে পথভ্রষ্ট হতে হবে। সুতরাং হাদীছ যেহেতু দ্বীনের দু’টি মূলনীতির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি, তাই সাহাবীদের যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী যুগসমূহে আলেম হাদীছ সংরক্ষণ ও সংকলনে কঠোর পরিশ্রম করেছেন।
হাদীছ ছাড়া ইসলামের প্রথম মূলনীতি কুরআন বুঝার কোন সুযোগ নেই। যুগে যুগে যারাই হাদীছ ছাড়া কুরআন বুঝতে চেষ্টা করেছে তারাই গোমরাহ হয়েছে। কুরআন থেকে হাদীছকে আলাদা করার কারণেই সকল বাতিল ফির্কার উৎপত্তি হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা কুরআনকে হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন বলেই ইসলামের শত্রুরা আজ পর্যন্ত কুরআনের মধ্যে কোন প্রকার বিকৃতি সাধন করতে পারে নি। আর সুন্নাত হেফাজতের দায়িত্ব সরাসরি না নেয়ার কারণে এবং তা সংরক্ষণের দায়িত্ব এই উম্মতের উপর ছেড়ে দেয়ার কারণে ইসলাম বিদ্বেষীরা সুন্নাতের মধ্যে ভেজাল ঢুকিয়ে দিয়ে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে হাজার হাজার জাল হাদীছে রচনা করে তাদের মাঝে ছেড়ে দিয়েছে এবং এর মাধ্যমে মুসলিমদের মধ্যে বিবেদ ও দলাদলি সৃষ্টি করার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে উম্মতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাদের এই ষড়যন্ত্রকে বুঝতে পেরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছগুলো বিলুপ্ত হওয়া এবং জাল ও যঈফের সাথে মিশে যাওয়া থেকে উদ্ধারের কাজে আত্মনিয়োগ করেছেন। তাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সাধনার ফলে মুসলিম জাতি আজ হাদীছে মৌলিক গ্রন্থগুলো হাতে পেয়েছে।
সুতরাং উম্মাতের উচিত এই পবিত্র রত্মটির প্রতি গুরুত প্রদান করা এবং সে অনুযায়ী তাদের আমলগুলো সংশোধন করে নেয়া।
ইত্তেবায়ে সুন্নাত বা সুন্নাতের অনুসরণ
আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন
No comments found.