ক্রোধান্বিত হওয়ার সময় যা করণীয়

লিখেছেঃ আব্দুল্লাহ শাহেদ //


নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রোধান্বিত ব্যক্তিকে ক্রোধের আগুন নির্বাপণ করার জন্য অযু করার আদেশ করেছেন। আর যদি ক্রোধান্বিত ব্যক্তি দাঁড়ানো অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে বসার আদেশ দিয়েছেন। আর বসা থাকলে শয়ন করতে বলেছেন আর শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। 
ক্রোধ ও লোভ (নারী, সম্পদ, নেতৃত্ব ইত্যাদির প্রতি আসক্তি ও লোভ) যেহেতু মানুষের অন্তরে আগুনের জ্বলন্ত অঙ্গার তাই উপরোক্ত পদ্ধতিতে নিবারণ করার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ 
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنْسَوْنَ أَنْفُسَكُمْ وَأَنْتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلا تَعْقِلُونَ 
তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না? (সূরা বাকারাঃ ৪৪) 
সকল প্রকার পাপ যেহেতু রাগ ও প্রবৃত্তির অনুসরণের কারণেই হয়ে থাকে আর রাগের বশবতী হয়েই যেহেতু মানুষ খুন-খারাবীতে লিপ্ত হয় এবং প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করার জন্যই ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাই আল্লাহ্ তাআলা সূরা আনআম, বনী ইসরাঈল ও সূরা ফুরকানে হত্যা এবং ব্যভিচারের বিষয়টি একসাথে উল্লেখ করেছেন এবং তা থেকে বিরত থাকার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ 
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلا تَقْتُلُوا أَوْلادَكُمْ مِنْ إِمْلاقٍ نَحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلا بِالْحَقِّ ذَلِكُمْ وَصَّاكُمْ بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ 
“আপনি বলুনঃ এসো, আমি তোমাদেরকে ঐসব বিষয় পাঠ করে শুনাই, যেগুলো তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন। তা এই যে, আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না, পিতা-মাতার সাথে সদয় ব্যবহার করো, স্বীয় সন্তানদেরকে ভয়ে হত্যা করো না আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে আহার দেই। আর নির্লজ্জতার (ব্যভিচারের) কাছেও যেয়ো না, প্রকাশ্য হোক কিংবা অপ্রকাশ্য, যাকে হত্যা করা আল্লাহ্ হারাম করেছেন, তাকে হত্যা করো না; কিন্তু ন্যায়ভাবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা বুঝ”। (সূরা আনআমঃ ১৫১) আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেনঃ 
وَالَّذِينَ لا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلا بِالْحَقِّ وَلا يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا إِلا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا 
“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না, আল্লাহ্ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ্ তাদের গোনাহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তিত করে দেবেন। (সূরা আলফুরকানঃ ৬৮) 
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন পছন্দনীয় বিষয় দেখলে বলতেনঃ 
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى بِنِعْمَتِهِ تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ 
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যার নেয়ামতেই সকল ভাল কাজ পরিপূর্ণ হয়। আর অপছন্দনীয় কিছু দেখলে বলতেনঃ 
الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى كُلِّ حَالٍ 
সর্বাবস্থায় সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কেউ কোন ভাল জিনিস তাঁর সামনে রাখলে বা তাঁর খেদমত করলে তিনি তার জন্য দুআ করতেন। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) যখন তাঁর সামনে অযুর পানি রাখলেন তখন তিনি তার জন্য দুআ করলেনঃ 
اللَّهُمَّ فَقِّهْهُ فِى الدِّين وعلمه التأويل 
হে আল্লাহ্! তুমি তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান কর এবং কুরআনের তাফসীর শিক্ষা দাও। রাত্রে পথ চলার সময় ঘুমের কারণে তিনি যখন উট থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলেন তখন আবু কাতাদা (রাঃ) তাঁকে সাহায্য করলে তিনি বললেনঃ আল্লাহর নবীকে হেফাজত করার কারণে আল্লাহ্ তোমাকেও হেফাজত করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কোন ব্যক্তির উপকার করা হল সে যদি উপকারী জন্য বলেঃ جزاك الله خيرا আল্লাহ্ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন, তাহলে সে উপকারীর খুব ভাল প্রশংসা করল। যে ব্যক্তি তাঁকে ঋণ দিয়েছিলেন তিনি তা পরিশোধ করার সময় বলেছিলেনঃ 
بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالْأَدَاءُ 
আল্লাহ্ তোমার সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের (মন্তানদের) মধ্যে বরকত দান করুন। নিঃসন্দেহে আল্লাহর প্রশংসা ও সময় মত পরিশোধ করে দেয়াই ঋণের একমাত্র বদলা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য কেউ হাদীয়া পাঠালে তিনি তা গ্রহণ করতেন এবং তার চেয়ে বেশী বদলা দিতেন। আর কারও হাদীয়া ফেরত দিলে তিনি ফেরত দেয়ার কারণ বলে দিতেন। সা’ব বিন জুসামা (রাঃ) যখন তাঁকে বন্য গাধা শিকার করে গোশত হাদীয়া দিলেন তখন তিনি তাকে বলেছেনঃ তোমার হাদীয়া এই জন্য ফেরত দিচ্ছি যে, আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। 
তিনি তাঁর উম্মতকে আদেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন গাধার ডাক শুনে আউযুবিল্লহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পাঠ করে এবং মোরগের ডাক শুনে যেন আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করে। বর্ণনা করা হয় যে, তিনি আগুন লাগলে আল্লাহু আকবার বলার আদেশ দিয়েছেন। তাকবীর আগুনকে নিভিয়ে ফেলবে। 
মসলিসে একত্রিত ব্যক্তিদের জন্য তিনি অপছন্দ করতেন যে, তাদের মজলিস আল্লাহ্ তাআলার যিকির থেকে শূন্য হবে। তিনি এ ব্যাপারে বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জায়গায় বসবে এবং তাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করবে না, সেখানে আল্লাহর পক্ষ হতে বিষণœতা (দুঃখ, ক্লান্তি, বেদনা) নেমে আসবে। আর যে ব্যক্তি শয়ন করবে, কিন্তু আল্লাহর স্মরণ করবে না তার উপরও আল্লাহর পক্ষ হতে পেরেশানি নেমে আসবে। তিনি আরও বলেনঃ যে ব্যক্তি এমন মজলিসে বসবে যেখানে অনর্থক বাজে কথা (গোলমাল) হয় সেই মসলিস ত্যাগ করার পূর্বে সে যদি এই দুআ পাঠ করেঃ 
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ 
উচ্চারণঃ সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদকিা, আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা, আল্লাহুম্মাগ ফিরলী” তাহলে সেই মজলিসে যত ভুল-ত্র“টি হবে আল্লাহ্ তাআলা পক্ষ হতে তা ক্ষমা করে দেয়া হবে। 
দুআটির অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার পবিত্রতাসহ আমি তোমার প্রশংসা করছি। তুমি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার নিকট তাওবা করছি। 
সুনানে আবু দাউদে আছে, মজলিস ত্যাগ করার পূর্বে তিনি এই দুআটি পাঠ করতেন। তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ এটি হচ্ছে ঐ মজলিসে যা কিছু হবে তার কাফ্ফারা। 

মন্তব্য করুন।

No comments found.

New comment