নাম ও কুনীয়ত (উপনাম) রাখা সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নাত

আব্দুল্লাহ শাহেদ //

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ঐ ব্যক্তির নাম যে নিজের নাম মালিকুল আমলাক তথা শাহানশাহ বা রাজাধিরাজ রাখল। কেননা আল্লাহই একমাত্র বাদশাহ। তিনি আরও বলেনঃ আল্লাহর কাছে সবচেয়ে অধিক প্রিয় নাম হচ্ছে আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রাহমান। সবচেয়ে অধিক সুন্দর নাম হচ্ছে, হারিছ ও হাম্মাম এবং মন্দ নাম হচ্ছে র্হাব (যুদ্ধ) ও র্মুরা (তিক্ত)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ তোমরা ছেলে সন্তানের নাম ইয়াসার, রাবাহ, নাজিহ এবং আফলাহ্ রাখবে না। কেননা হয়ত তোমরা কখনও বলবে যে এখানে সে (ইয়াসার বা রাবাহ বা নাজিহ বা আফলাহ) আছে কি? সে যদি সেখানে না থাকে তাহলে বলা হবে নাই।
টিকাঃ ইয়াসার অর্থ সহজ, রাবাহ, নাজিহ ও আফলাহ-এই তিনটি নামের অর্থ হচ্ছে সফল, সফলতা ইত্যাদি ভাল অর্থ। এই শব্দগুলোর দ্বারা কোন ছেলে সন্তানের নাম রাখতে নিষেধ করার কারণ হল, উপরোক্ত নামে যদি কারও নাম রাখা হয় তাহলে সম্ভাবনা আছে যে, অচিরেই তাকে উক্ত নাম ধরে ডাকা হবে। বলা হবে এখানে আফলাহ (সফলতা) নাজিহ (সফলকামী) রাবাহ (লাভবান) আছে কি? সে যদি ঐ স্থানে উপস্থিত না থাকে তাহলে অবশ্যই উত্তর আসবে এখানে সে নাই। এই না সূচক উত্তরকে শ্রোতাগণ অশুভ লক্ষণ মনে করতে পারে। অর্থাৎ এখানে সফলতা, সফল লাভবান কোন ব্যক্তি নেই- এ ধরণের কথা লোকেরা কুলক্ষণ মনে করতে পারে। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরণের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। টিকা এখানেই শেষ।
মন্দ নামকে ভাল নামে পরিবর্তন করা তার পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি عاصية আসীয়া (পাপী) নাম পরিবর্তন করে জামীলাহ নাম রেখেছেন। উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়া (রাঃ)এর পূর্বের নাম ছিল র্বারা (পূণ্যবান)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জুওয়াইরিয়া। যায়নাব বিনতে উম্মে সালামা (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম র্বরা নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি বলেছেনঃ তোমরা নিজেদেরকে পবিত্র বলে দাবী করো না। কেননা আল্লাহই ভাল জানেন তোমাদের মধ্যে কে পবিত্র।
টিকাঃ বার্রা বা এ জাতীয় যে সমস্ত নামের মধ্যে নামকরণকৃত ব্যক্তির পবিত্রতা ও প্রশংসার আভাস রয়েছে সে সমস্ত নাম রাখা ঠিক নয়। এমনি ভাবে দূর্ণাম ও নিন্দা বুঝায় এমন নামেও কারও নাম রাখা মাকরূহ। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরণের নাম পরিবর্তন করে ভাল ও সুন্দর নাম রেখেছেন। তিনি এমন নামে সন্তানের নাম করণ করতে বলেছেন, যাতে বিনয়-নম্রতা ও আল্লাহর আনুগত্যের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। যেমন আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর দাস-বান্দা, আব্দুর রাহমান বা রাহমানের গোলাম ইত্যাদি। আর যে সমস্ত নামের মধ্যে শির্ক রয়েছে সে সমস্ত নাম থেকে তিনি কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন। যেমন আব্দুল হারিছ (শয়তানের বান্দা) আব্দুল মুত্তালেব (মুত্তালেবের বান্দা) ইত্যাদি। টিকা এখানেই শেষ।
তিনি আবুল হাকামের নাম পরিবর্তন করে আবু শুরাইহ রেখেছেন। আর তিনি আসরামের নাম বদল করে যারআ রেখেছেন। সাঈদ ইবনুল মুসায়্যেব (রাঃ)এর দাদার নাম ছিল হায্ন (শক্ত মাটি)। তিনি তা পরিবর্তন করে রাখলেন সাহল (নরম ভূমি)। যাতে চলাচল করা সহজ এবং যা চাষাবাদের জন্য উপযোগী।
ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আস (পাপী-অবাধ্য), আযীয (শক্তিশালী-কঠিন), আতলা, শয়তান (অভিশপ্ত-বিতাড়িত), হাকাম (মহা জ্ঞানী), গুরাব (কাক), হুবাব, শিহাব (অগ্নিপিন্ড) ইত্যাদি নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন। তিনি শিহাবের নাম পরিবর্তন করে হিশাম রেখেছেন। হারব (যুদ্ধ)-এর নাম বদল করে সিল্ম-সাল্ম (শান্তি) রেখেছেন। মুযতাযি (ঘুমন্ত-শায়িত)-এর নাম পরিবর্তন করে মুনবাইছ (জাগ্রত) রেখেছেন। তিনি সাদা যমীনের নাম বদল করে সবুজ যমীন নাম করণ করেছেন। গোমরাহের ঘাটিকে পরিবর্তন করে হেদায়াতের ঘাটি হিসেবে নাম দিয়েছেন। বনু মুগবীয়া (গোমরাহ সম্প্রদায়)এর নাম বদল করে বনু রিশদাহ তথা জ্ঞানী ও হেদায়াতপ্রাপ্ত সম্প্রদায় বলে নাম দিয়েছেন। (মূলতঃ কোন মানুষ, বস্তু বা স্থানের এমন রাখাকে তিনি অপছন্দ করতেন, যা মানুষের কাছে অপছন্দনীয় অর্থ বহন করে বা অপছন্দনীয় কোন অর্থের দিকে ইংগিত বহন করে)।
টিকাঃ সৗদি আরবের আল-যুবাইল শহর থেকে আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার দূরে একটি অঞ্চলের নাম ছিল رأس الزور রাসুয যুর। এর সরল বাংলা অনুবাদ হচ্ছে মিথ্যার মাথা। আরবী ভাষায় যার সামান্য জ্ঞান আছে সেও নামটি শুনেই অপছন্দ করবে। স্থানের নাম মিথ্যার মাথা হয় কিভাবে? তা ছাড়া এই শহরে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যবান খণিজ সম্পদ। এটি ২০০৯-১০ সালের ঘটনা। ২০১২ ইং সালে সেই অঞ্চলে গিয়ে দেখি যে সব স্থানে রাসুয্ যুর লেখা ছিল সেখানে লেখা আছে رأس الخير অর্থাৎ কল্যাণের মাথা। পরবর্তীতে জানতে পারলাম যে, বর্তমান সৌদি বাদশাহ আব্দুল্লাহ্ বিন আব্দুল আযীয সেখানে কোন এক প্রকল্প উদবোধন করতে এসে এই শহরের পুরাতন নাম রাসুয্ যুরের পরিবর্তে রাসুল খাইর (কল্যাণের মাথা) রেখেছেন। টিকা এখানেই শেষ। বস্তুর নাম যেহেতু বিশেষ অর্থ বহন করে, তাই নাম ও নামকরণকৃত বস্তুর মাঝে গভীর সম্পর্ক থাকা জরুরী। সুতরাং কারও নাম যেন এ রকম না হয় যে, নামের অর্থ হচ্ছে এক রকম আর সেই ব্যক্তির চরিত্র ও আচার-আচরণ সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ এটি এমন বিষয়, যা মানুষের বিবেক ও স্বভাব মেনে নেয় না।
টিকাঃ যেমন কারও নাম রাখ হল মিষ্টি। কিন্তু দেখা দেখা গেল তার ব্যবহার অত্যন্ত কঠোর ও নিকৃষ্ট। অপর পক্ষে কারও নাম রাখ হল তিক্ত-তিতা। কিন্তু দেখা গেল তার ব্যবহার খুবই মিষ্ট। এ ক্ষেত্রে নামের অর্থ ও নাম বহনকারী লোকের বৈশিষ্ট ভিন্ন হওয়ার কারণে এবং উভয়ের মাঝে পার্থক্য থাকার কারণে মানুষের বিবেক এ সমস্ত নাম মানুষ সহজভাবে মেনে নেয় না। এমনি কারও নাম যদি রাখা হয় আসাদ (সিংহ), কিন্তু দেখা যায় সে সিংহের মত সাহসী নয়, কারও নাম যদি রাখা হয় জাওয়াদ (দানবী), কিন্তু সে খুবই কৃপণ তাহলে এভাবে নাম রাখা ইসলাম সমর্থন করে না। টিকা এখানেই শেষ।সুন্দর নামের অধিকারীর উপর সুন্দর নামের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। যেমন আব্দুল্লাহ্, আব্দুর রাহমান ইত্যাদি নামের যেহেতু সুন্দর অর্থ রয়েছে তাই এই জাতিয় নামের কারণেও মানুষ সৎগুণাবলী অর্জন করতে পারে। অনেক সময় ভাল নামের কারণেও মানুষের ভালবাসা ও সমাদর পাওয়া যায়।
ব্যক্তির নাম তার ব্যক্তিসত্তার উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। মানুষও তার ভাল বা খারাপ, উচ্চ মানের বা নিম্ন মানের নাম দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। কোন একজন আরব কবি বলেনঃ তুমি যদি বিশেষ উপাধি ওয়ালা কোন মানুষকে দেখ তাহলে তার বৈশিষ্ট সেই উপাধির মধ্যেই খুঁজে পাবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্দর নাম পছন্দ করতেন এবং সুন্দর নাম রাখার আদেশ দিতেন। তাঁর কাছে কোন লোক আসলে তিনি আগমনকারীর নাম ও আকার-আকৃতি সুন্দর হওয়া পছন্দ করতেন। নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থায় তিনি নামের অর্থ উপলব্ধি করতেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি এবং তাঁর সাহাবীগণ উকবা বিন রাফে-এর ঘরে অবস্থান করছেন। তখন তাদের কাছে ইবনে তাবের তাজা (নরম) খেজুর উপস্থিত করা হল। তিনি এর ব্যাখ্যা করলেন যে, দুনিয়াতে মুসলমানদের শেষ পরিণতি ভাল হবে এবং আখেরাতে তারাই সফলকাম হবে। আর আল্লাহ তাদের জন্য যে দ্বীনকে চয়ন করেছেন, তা নরম ও তাজা খেজুরের ন্যায় খুব সহজ-সরল।
হুদাইবিয়ার দিন সুহাইল বিন আমরের আগমনের মাধ্যমে তিনি কাজটি সহজ হওয়ার ব্যাখ্যা করেছেন। কেননা সুহাইল নামটি সাহল থেকে গৃহীত। এর অর্থ হচ্ছে সহজ। একবার তিনি ছাগলের দুধ দোহন করতে বললেন। একজন লোক সেই কাজে অগ্রসর হলে তিনি তার নাম জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কি? সে বললঃ র্মুরা (তিক্ত)। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ তুমি বস। এরপর আরেক ব্যক্তি দাঁড়াল। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার নাম কি? সে বললঃ হারব (যুদ্ধ)। তিনি তাকেও বসতে বললেন। আরেক ব্যক্তি দাঁড়ালে তিনি তারও নাম জিজ্ঞেস করলে সে বললঃ ইয়া-ঈশ (দীর্ঘ জীবি হবে)। এবার তিনি বললেনঃ তাহলে তুমি দুধ দোহন কর।
যে সমস্ত জায়গার নাম সুন্দর নয়, তিনি তিনি তা অপছন্দ করতেন এবং সেখান দিয়ে পথ চলাও অপছন্দ করতেন। তিনি একবার দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি সেই পাহাড় দু’টির নাম জিজ্ঞেস করলেন। লোকেরা বললঃ ফাযেহ (অপদস্তকারী) এবং মুখযি (অপমানকারী)। এ রকম নাম শুনে তিনি সেই রাস্তা বাদ দিয়ে অন্য পথে চললেন।
একই ব্যক্তির দেহ ও মনের মধ্যে যেরকম সম্পর্ক রয়েছে নাম ও নাম বহনকারী ব্যক্তির মধ্যে তেমন গভীর সম্পর্ক থাকে। তাই বুদ্ধি ও বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তিগণ কোন মানুষের নাম শুনেই তার আচার-ব্যবহার ও অন্যান্য গুণাগুণ সম্পর্কে ধারণা অর্জন করেন। এমনিভাবে আচার-ব্যবহার ও ব্যক্তির গুণাবলী দেখেই তার নাম সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে পারেন। ইয়াস বিন মুআবীয়া এবং আরও কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয় যে, তারা কোন লোক দেখেই বলে দিতেন, এই ব্যক্তির নাম এমন হওয়া উচিত, অমুক ব্যক্তির নাম এ রকম হওয়া উচিত বা এ রকম হতে পারে। তাদের অনুমান কখনও ভুল হত না। এর বিপরীতে নাম শুনেও ব্যক্তির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা লাভ করা যায়। একদা উমার (রাঃ) একজন লোকের নাম জিজ্ঞেস করলে সে বললঃ আমার নাম জামরা (জ্বলন্ত আঙ্গার)। তারপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার পিতার নাম কি? সে বললঃ শিহাব (অগ্নিশিখা)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার বাড়ী কোথায়? সে বললঃ র্হারাতুন নার (যেখানে আগুনের তাপ লাগে)। অতঃপর উমার (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কোন্ অঞ্চলের লোক? সে বললঃ লাযার এলাকায় (জ্বলন্ত আগুন বিশিষ্ট এলাকায়)। এবার উমার (রাঃ) বললেনঃ গিয়ে দেখো তোমার বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ সে গিয়ে দেখল ঠিকই তার ঘরবাড়ি জ্বলে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন সুহাইল নাম শুনে কাজ সহজ হয়ে যাওয়ার আশা পোষণ করেছেন। তিনি উম্মতকে সুন্দর নাম রাখার আদেশ দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন যে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে দুনিয়ার নামেই ঢাকা হবে।
হে পাঠক! আপনি চিন্তা করুন, কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য আহমাদ ও মুহাম্মাদ নাম নির্বাচন করা হয়েছে, যা তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীর সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। মুহাম্মাদ অর্থ হচ্ছে প্রশংসিত। অর্থাৎ তার মধ্যে উত্তম ও প্রশংসিত গুণাবলী প্রচুর পরিমাণ থাকার কারণে তিনি মুহাম্মাদ আর অন্যের তুলনায় তিনি অধিক প্রশংসাকারী এবং অধিক প্রশংসিত গুণ তাঁর মধ্যে বিদ্যমান বলে তিনি হচ্ছেন আহমাদ।
এমনিভাবে তিনি আবুল হাকামকে আবু জাহেল উপনামে নামকরণ করেছেন, আব্দুল উয্যাকে আবু লাহাব বলেছেন। কেননা আবু লাহাব অর্থ হচ্ছে প্রজ্বলিত আগুনের পিতা বা আগুন ওয়ালা। কারণ অচিরেই সে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় আসলেন তখন মদীনার নাম ছিল ইয়াছরিব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহাকে পরবির্তন করে মদীনার নাম রাখলেন তাইবা। কেননা ইয়াছরিব শব্দের উৎপত্তি হচ্ছে তাছরীব থেকে। তাছরীব অর্থ দোষারূপ, তিরস্কার করা ইত্যাদি। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনের মাধ্যমে যেহেতু মদীনা এ সমস্ত দোষত্রুটি থেকে পবিত্র হয়ে গেছে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে তাইবা।
সুন্দর নাম যেহেতু নাম বহনকারীর সুন্দর আচার-আচরণের দাবী রাখে তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন আরব গোত্রকে বলেছেনঃ হে বনী আব্দুল্লাহ! আল্লাহ তোমাদের এবং তোমাদের বাপ-দাদাদের নামকে সুন্দর করেছেন। পাঠক বৃন্দ লক্ষ্য করুন! তিনি কিভাবে এর মাধ্যমে আল্লাহর এবাদতের দিকে আহবান করেছেন?
বদর যুদ্ধের দিন কাফেরদের যেই তিন জন লোক প্রথমে মুসলমানদের মুকাবেলা করার জন্য বের হয়েছিল এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের থেকে যেই তিন জনে লোককে তাদের মুকাবেলা করার জন্য নির্বাচন করেছিলেন, তাদের নামগুলো নিয়ে চিন্তা করুন। তাদের নাম লো ছিল তাদের অবস্থার অনুরূপ। কাফেররা যাদেরকে নির্বাচন করেছিল তারা হলঃ অলীদ, উতবা ও শায়বা। অলীদ অর্থ শিশু বা নবজাতক, যার শুরুতেই থাকে দুর্বলতা। শায়বা অর্থ হচ্ছে এমন বৃদ্ধ, যার মধ্যে সকল প্রকার দুর্বলতা একত্রিত হয়। তাদের আরেকজনরে নাম ছিল উতবা (দোষারূপ করা, তিরস্কার করা ইত্যাদি)। তাদের তিনটি নামের মধ্যেই দুর্বলতার অর্থ বিদ্যমান। এতে বুঝা যায় তারা পরাজয়ের ফলে পরস্পর দোষারূপ করবে এবং অচিরেই তারা দুর্বল হয়ে পড়বে। এই নামগুলোর মুকাবেলায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে নির্বাচন করলেন তাদেরকে নিয়ে একটু চিন্তা করুন। তিনি এমন তিনজন লোককে নির্বাচন করলেন, যাদের নামগুলো তাদের চারিত্রিক গুণাবলীর অনুরূপ ছিল। তাদের মুকাবেলা করার জন্য আলী, হামযাহ এবং উবাইদাহ ইবনুল হারিছ (রাঃ)কে নিযুক্ত করলেন। আলী নামটি العلو আল-উলু থেকে গৃহিত। এর দ্বারা উচ্চ মর্যাদা অর্জন, শক্তি ও বিজয় অর্জন বুঝায়। হামযাহ অর্থ সিংহ, বীরত্ব, সাহসিকতা ইত্যাদি। সুতরাং তারা আল্লাহর এবাদত, আখেরাতের উদ্দেশ্যে পরিশ্রম ও বীরত্ব এবং সাহসিকতা প্রদর্শনের মাধ্যমে কাফেরদের উপর জয়লাভ করেছেন।
আল্লাহ্ তাআলার নিকট সেই নামই অধিক প্রিয় যার অর্থ অধিক উত্তম। তাই আল্লাহ্ তাআলার নামগুলো থেকে আল্লাহ্ এবং রাহমান নামের দিকে উবুদিয়তের তথা আবদ্ শব্দটি যোগ করে আব্দুল্লাহ এবং আব্দুর রাহমান নাম রাখা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। এই নাম দু’টি আল্লাহর নিকট আব্দুল কাদের ও আব্দুল কাহের নাম রাখার চেয়েও অধিক প্রিয়। কারণ বান্দা ও তার রবের মাঝে শুধু এবাদত ও রহমতের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং আল্লাহ্ স্বীয় রহমতে বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন ও পূর্ণতা দিয়েছেন। আর সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মুহাব্বত, ভয় ও আশা নিয়ে বান্দা আল্লাহর এবাদত-বন্দেগী করবে।
প্রত্যেক মানুষই যেহেতু স্বীয় ইচ্ছায় নিজেকে পরিচালিত করে আর যেহেতু কোন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দেয়া থেকেই ইচ্ছার সূচনা হয় এবং বান্দার ইচ্ছাতেই কামাই ও অর্জন হয়ে থাকে তাই হারেছ ও হাম্মাম (উদ্যোমী, উদ্যোগী ও পরিশ্রমী) হচ্ছে সবচেয়ে বাস্তব ভিত্তিক নাম। আর প্রকৃত রাজত্ব যেহেতু একমাত্র আল্লাহর জন্যই তাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট নাম হচ্ছে শাহানশাহ বা রাজাধিরাজ এবং সুলতানুস্ সালাতীন। এই উপাধি একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও শোভনীয় নয়। সুতরাং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারও জন্য এই উপাধি ধারণ করা বাতিল বা অন্যায়। আল্লাহ্ তাআলা অন্যায়কে ভালবাসেন না। কতক আলেম কাযীউল কুযাত পদবী ধারণ করাকেও অন্যায়ের অন্তর্ভূক্ত করেছেন। সাইয়েদুন নাস (সকল মানুষের নেতা) নাম রাখাও অপছন্দনীয়। কেননা এটি শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য নির্দিষ্ট।
মুরারা (তিক্ত) এবং হারব (যুদ্ধ) যেহেতু মানুষের নিকট সবচেয়ে অপ্রিয় তাই এই দু’টি নাম রাখা ঠিক নয়। এর উপর অনুমান করেই হানজালা, হাজন এবং এ জাতীয় অন্যান্য নাম অপছন্দনীয়। নবীদের চরিত্র যেহেতু সর্বোত্তম তাই তাদের নামগুলোও সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তিনি উম্মাতকে আদেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন নবীদের নামে নাম রাখে। সুনানে আবু দাউদ ও নাসাঈতে বর্ণিত হয়েছে যে, তোমরা নবীদের নামে নাম রাখো। নবীদের নামে নাম রাখার মাধ্যমে তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরী হবে এবং নবীদের গুণাবলীতে গুণান্বিত হওয়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
শিশুর নাম ইয়াসার (সহজ) রাখতে নিষেধাজ্ঞার কারণ হচ্ছে যার দিকে হাদীছে ইঙ্গি করা হয়েছে। কেননা তুমি হয়ত তাকে এই বলে ডাকবে যে, এখানে ইয়াসার আছে কি? লোকেরা হয়ত বলবেঃ এখানে এমন কিছু (ইয়াসার বা সহজ) নেই। আল্লাহই ভাল জানেন, এই অংশ কি হাদীছের? না রাবী কর্তৃক বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেহেতু এ সমস্ত নামের কারণে মানুষেরা অশুভ ধারণা করতে পারে তাই তাদের ধারণাকে খন্ডন করার জন্যই তিনি এ ধরণের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং উম্মাতের প্রতি দয়াবান নবী চেয়েছেন যে, তার উম্মাত এমন সব মাধ্যম থেকে নিরাপদ রাখবেন, যা তাদেরকে অপছন্দনীয় বিষয় শ্রবণ থেকে কিংবা অপছন্দনীয় পরিস্থিতির শিকার হওয়া থেকে মুক্ত রাখবে। তা ছাড়া ইয়াসার (সহজকারী), নাজীহ (সফলকাম), রাবাহ (লাভ, লাভবান) ইত্যাদি নাম রাখলে সম্ভাবনা আছে যে, নাম যেই অর্থ বহন করে নামের অধিকারীর ভিতরে তার সম্পূর্ণ বিপরীত গুণাবলী থাকতে পারে। কোন লোক তার সন্তানের নাম ইয়াসার (সহজকারী) রাখতে পারে। অথচ সেই সন্তান এমন হতে পারে যে, সে মানুষের উপর খুবই কঠোর। এমন লোককে নাজীহ (সফলকাম) রাখতে পারে, যার ভিতরে কোন সফলতা নেই এবং এমন লোককেও রাবাহ (লাভবান) রাখতে পারে, যিনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। এ রকম হলে এই গুণগুলো উপরোক্ত নাম বহনকারীদের সাথে সম্পৃক্ত করা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত হবে। এতে আল্লাহর উপরও মিথ্যারোপ করা হবে। কারণ আল্লাহ্ তাকে সেই গুণাবলী প্রদান করেন নি। আরেকটি বিষয় হল তার নাম অনুযায়ী তাকে কাজ করতে বলা হতে পারে। অথচ তার সে রকম কাজ করার ক্ষমতা নেই। পরিণামে তাকে নিন্দা ও বিদ্রূপ করা হবে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, যে ব্যক্তি কবিতা রচনা করতে পারে না তাকে যদি কবি নাম দেয়া হয় এবং কৃপণ ব্যক্তিকে যদি দানবীর নাম রাখা হয় তাহলে তাদের নামের দাবী অনুযায়ী কাজ করতে বলা হলে তারা যদি তা করতে না পারে তাহলে অবশ্যই তিরস্কারের সম্মুখীন হবে। কবি বলেনঃ
লোকেরা মূর্খতা বশতঃ سديد (সঠিক, সৎলোক) হিসেবে নাম রেখেছে। অথচ তোমার মধ্যে কোন সঠিকতা পাওয়া যাচ্ছে না।
কোন কোন প্রশংসা অনেক সময় নিন্দায় পরিণত হয়, যা প্রশংসা কৃত ব্যক্তির অপমানের কারণ। কেননা মানুষ হয়ত কারও প্রশংসায় এমন গুণ উল্লেখ করে, যা উক্ত ব্যক্তির মধ্যে নেই। এর ফলে কেউ তার কাছে সেই গুণের সাথে সম্পৃক্ত কোন বিষয় দাবী করতে পারে এই ভেবে যে, তার কাছে উহা বিদ্যমান। যখন তার কাছে সেই গুণটি পাবেনা তখন তাকে গালি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং এ ধরণের লোকদের যদি প্রশংসাহীন নাম রাখা হয় তাহলে কোন সমস্যা হবে না। আরেকটি কথা হল, যার মধ্যে প্রশংসিত কোন গুণ নেই তাকে যদি প্রশংসিত নামে ডাকা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি এই ধারণা করতে পারে যে, মূলতই সে প্রশংসিত গুণের অধিকারী। ফলে সে নিজেকে পবিত্র বলে দাবী করতে পারে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম র্বারা নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। এর উপর ভিত্তি করেই রশীদ (বুদ্ধিমান, জ্ঞানী), মুতী (অনুগত) ইত্যাদি নাম রাখা মাকরূহ।
উপরোক্ত নামগুলো রাখা মুসলমানদের জন্য মাকরূহ। আর কাফেরদেরকে কখনই এ সমস্ত নামে ডাকা যাবে না এবং তারা নিজেদের জন্য যে সমস্ত সম্মানিত নাম রাখে তা দ্বারাও তাদেরকে সম্বোধন করা যাবে না।
উপনাম রাখার ব্যাপারে কথা হচ্ছে তা এক প্রকার সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুহাইবের উপনাম রেখেছেন। আবু ইয়াহইয়াহ। আলীর উপনাম রেখেছেন আবু তুরাব। আনাস (রাঃ)এর ছোট ভাই যখন শিশু ছিলেন তখনই তার উপনাম রেখেছেন আবু উমায়ের।
যার সন্তান ছিল এবং যার ছিল না তাদের সকলেরই কুনিয়ত তথা উপনাম রাখা তাঁর পবিত্র সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। শুধু আবুল কাসেম ব্যতীত তিনি অন্য কোন উপনাম রাখতে নিষেধ করেন নি। তাই এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেছেন এই উপনাম যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছিল, তাই অন্যদের জন্য এটি রাখা জায়েয নয়। অন্যরা বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম ও কুনিয়ত এক সাথে রাখা যাবে না। এ ব্যাপারে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইমাম তিরমিজী সেটিকে সহীহ বলেছেন। আবার কতক আলেম বলেছেনঃ তাঁর নাম ও কুনিয়ত এক সাথে রাখতে মানা নেই। কেননা এ ব্যাপারে আলী (রাঃ) থেকে একটি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আলী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে বলেছেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরে যদি আমার কোন ছেলে সন্তান হয় তাহলে আমি কি আপনার নামে তার নাম এবং আপনার কুনিয়াতেই তার কুনিয়ত রাখতে পারি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, রাখতে পার। ইমাম তিরমিজী (রঃ) এটিকেও সহীহ বলেছেন। কেউ বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবদ্দশায় তাঁর কুনিয়ত গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর জায়েয।
সঠিক কথা হচ্ছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কুনিয়ত গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। তার জীবদ্দশায় কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। এমনিভাবে নাম ও কুনিয়ত একসাথে রাখাও নিষিদ্ধ। আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছ সহীহ হওয়াতে সন্দেহ আছে। ইমাম তিরমিজী হাদীছ সহীহ বলার ক্ষেত্রে সামান্য উদারতা দেখিয়েছেন। আলী (রাঃ) বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে অনুমতি দিয়েছেন। এ থেকে বুঝা যায় যে, অনুমতিটি শুধু তার জন্যই নির্দিষ্ট ছিল; অন্যদের জন্য নিষিদ্ধতা এখনও বলবৎ রয়েছে। আর আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীছঃ কে আমার নামে নাম রাখাকে হালাল করল? আর কে আমার কুনিয়তকে হারাম করল? এটি একটি গরীব (যঈফ হাদীছ)। সহীহ হাদীছের মুকাবেলায় এটি দলীল হতে পারে না।
সালাফদের একটি দল আবু ঈসা কুনিয়ত রাখাকে অপছন্দ করেছেন। অন্য একটি দল অনুমতি দিয়েছেন। ইমাম আবু দাউদ যায়েদ বিন আসলাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, উমার (রাঃ)এর এক পুত্র আবু ঈসা কুনিয়ত রাখার কারণে তিনি তাকে প্রহার করেছেন। মুগীরা ইবনে শুবা আবু ঈসা কুনিয়ত গ্রহণ করলে উমার (রাঃ) বললেনঃ আবু আব্দুল্লাহ হিসেবে কুনিয়ত রাখা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? তিনি বললেনঃ আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই কুনিয়ত দান করেছেন। তখন উমার (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বের ও পরের সমস্ত গুনাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আর আমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে, তা আমরা জানি না। এরপর মৃত্যু পর্যন্ত তাকে আবু আব্দুল্লাহ্ কুনিয়তেই ডাকা হত।
তিনি আঙ্গুরকে কারাম বলতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেনঃ কারাম হচ্ছে মুমিন ব্যক্তির অন্তর। কেননা কারাম শব্দটি প্রচুর কল্যাণ ও লাভ অর্থে ব্যবহৃত হয়।
টিকাঃ জাহেলী যুগের আরবরা আঙ্গুর, আঙ্গুরের গাছ এবং আঙ্গুর থেকে নির্মিত মদকে কারাম বলত। ইসলাম এসে আঙ্গুরকে কারাম বলতে নিষেধ করেছে। যাতে ভাল নামে ডাকার কারণে মদের প্রতি মুসলমানদের মনে কোন প্রকার আগ্রহ ও ভালবাস জাগ্রত না হয় এবং এর ভাল নাম শুনে কেউ যেন মদ্য পানে লিপ্ত না হয়। তাই বলা হয়েছে কারাম (উত্তম, ভাল ও কল্যাণকর) হচ্ছে মুমিন ব্যক্তি বা মুমিন ব্যক্তির অন্তর। মুমিনগণই এ সম্মানিত নামের হকদার; নিকৃষ্ট বস্তুর সুন্দর নাম ইসলাম সমর্থন করে না। টিকা এখানেই শেষ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমাদের নামাযের নামকরণে গ্রাম্য লোকেরা যেন তোমাদের উপর বিজয়ী না হয়। দেখো সেটি হচ্ছে ঈশার নামায। আর গ্রাম্য লোকেরা এটিকে আতামাহ বলে থাকে। তিনি আরও বলেনঃ তারা যদি জানতে পারত যে, ফজর ও ঈশার নামাযে কি পরিমাণ ছাওয়াব রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা এ দু’টিতে নামাযে শরীক হত। সঠিক কথা হচ্ছে ঈশাকে আতামাহ বলতে তিনি সম্পূর্ণরূপে নিষেধ করেন নি; বরং ঈশা নামটিকে পরিহার করে আতামাহ বলতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা যে এবাদতকে যেই নামে নামকরণ করেছেন তিনি সেই এবাদতকে আল্লাহর দেয়া নামেই সংরক্ষণ করতে চেয়েছেন। সুতরাং সেই নাম বর্জন করা যাবে না বা তার উপর অন্যটিকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। যেমনটি করে থাকে পরবর্তী যুগের আলেমগণ। তারা অনেক পুরাতন ইসলামী পরিভাষা ও শব্দের নাম পাল্টিয়ে দিয়েছেন। এতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, যা কেবল আল্লাহই অবগত আছেন।
আল্লাহ্ তাআলা যাকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং যে সমস্ত নামকে পূর্বে উল্লেখ করেছেন, তাকে প্রাধান্য দেয়া এবং পূর্বে উল্লেখ করা জরুরী। কুরবানীর ঈদের দিন প্রথমে নামাযের কথা বলেছেন। অতঃপর কুরবানী করতে বলেছেন। অযুতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো ধৌত করার ক্ষেত্রে প্রথমে তিনি মুখমণ্ডল ধৌত করার আদেশ দিয়েছেন, অতঃপর উভয় হাত, তারপর মাথা মাসেহ এবং সর্বশেষে উভয় পা ধৌত করার আদেশ দিয়েছেন। ঈদুল ফিতরে নামাযের পূর্বে ফিতরা আদায় করতে বলেছেন। তারপর নামাযের উদ্দেশ্যে ঈদগাহের দিকে বের হতে বলেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّى
“নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয় এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।” (সূরা আলাঃ ১৪-১৫) সুতরাং যেটিকে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিকে প্রথমেই রাখতে হবে।

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন

No comments found.

New comment