সংক্ষিপ্ত উমরাহ নির্দেশিকা

উমরার ফজিলত:
১) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ (এক উমরাহ অপর উমরার মধ্যবর্তী সকল গুনাহের কাফফারা স্বরুপ।) ( বুখারী ও মুসলিম )
২) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ তোমরা বার বার হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর, কেননা এ দুটো দরিদ্রতা ও গুনাহকে সে ভাবে মুছে ফেলে, যে ভাবে কর্মকারের হাওয়া দেয়ার যন্ত্র লোহার ময়লাকে দূর করে থাকে। (নাসায়ী- হাদীস সহীহ)

ইহরাম:
ইহরামের কাপড় পরা ও নিয়ত করার আগে শরীরের প্রয়োজনীয় পরিস্কার পরিচ্ছন্নের কাজ করে নিতে হবে। পুরুষরা ইহরামের জন্য প্রস্তুত কৃত সাদা দুটি চাদর ও মহিলারা তাদের সাধারণ পোষাক পরে মিকাত ছেড়ে যাওয়ার সময় অন্তরের নিয়তের সাথে বলবেনঃ (لَبَّيْكَ عُمْرَةً أَوْ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ عُمْرَةً) লাব্বাইকা উমরাতান, বা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা উমরাতান। উমরা যদি অন্যের পক্ষ থেকে হয় তবে অন্তরের নিয়তের সাথে (لَبَّيْكَ عُمْرَةً عَنْ) লাব্বাইকা উমরাতান আন এর পরে তার নাম উচ্চারণ করতে হবে। কাবা ঘর দেখার আগ পর্যন্ত তালবিয়া ও অন্যান্য সব ধরনের দুয়া পড়তে হবে। তালবিয়া হলোঃ (لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيْكَ لَكَ) ( লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,লাব্বাইকা লা-শারীকা লাকা লাব্বাইক,ইন্নাল হামদা অন্নি‘য়মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক লা শারীকা লাক )।

ইহরামের নিয়ত করার কারণে কিছু কাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায় সেগুলো হলোঃ
(১) সেলাই করে প্রস্তুতকৃত পোষাক পরা (পুরুষদের জন্য)। (২) মাথার সাথে লেগে থাকে এমন জিনিস দ্বারা মাথা ঢাকা। (৩) ইচ্ছাকৃত ভাবে মাথার চুল ও শরীরের পশম কাটা বা উঠান। (৪) হাত পায়ের নখ কাটা। (৫) আতর বা সুগন্ধি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা। (৬) স্থলচর প্রাণী শিকার করা। (৭) স্বামী-স্ত্রী মিলন করা বা এ জাতীয় বিষয়ে আলাপ আলোচনা করা। (৮) বিবাহের প্রস্তাব দেয়া বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। (৯) মহিলাদের জন্য হাত মোজা ব্যবহার, মুখ ঢাকা (তবে লোকজনের সামনে অবশ্যই মুখ ঢাকতে হবে)। (১০) মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানার গাছ গাছালী কাটা, ভাঙ্গা, উপড়ান (সর্বাস্থায়)। (১১) মক্কা ও মদিনার হারাম সীমানায় পরে থাকা জিনিস নেয়া (তবে তা মালিককে দেয়ার জন্য উঠান যাবে)।

মক্কাতে পৌঁছার পর কাজ সমূহঃ
(১) তওয়াফঃ
মক্কাতে পৌঁছে তওয়াফে যাওয়ার আগে ওযু করে নিতে হবে। কেননা তওয়াফের জন্য ওযু শর্ত। নামাযের সময় নিকটবর্তী না হলে, মসজিদে প্রবেশ করে তাহিয়াতুল মসজিদ না পড়ে সরাসরি তওয়াফে যেতে হবে। তওয়াফ শুরুর আগে পুরুষদের জন্য ইজতেবা বা ডান কাঁধ খালি করতে হবে, অর্থাৎ চাদরের মধ্যভাগ ডান কাঁধের নিচে দিয়ে নিয়ে বাম কাঁধের উপর ধারণ করতে হবে।(بِسْمِ الله اَللهُ أَكْبَرُ)(বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার) বলে হাজরে আসওয়াদ চুমা বা স্পর্শ করার মাধ্যমে তওয়াফ শুরু করতে হবে। চুমা বা স্পর্শ করার সুযোগ না হলে, হাজরে আসওয়াদ বরাবর গিয়ে শুধু ডান হাত দ্বারা হাজরে আসওয়াদের দিকে (اَللهُ أَكْبَرُ)(আল্লাহু আকবার) বলে ইশারার মাধ্যমে তওয়াফ শুরু করতে হবে। হাতে চুমা খেতে হবে না। হাজরে আসওয়াদের আগের কোণ রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছা পর্যন্ত সময়ে, কুরআন তেলাওয়াত ও যে কোন ধরণের দুয়া পড়া যায়, এ সময়টুকুতে নির্ধারিত কোন দুয়া হাদীসে আসে নাই। তবে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে নির্ধারিত একটি দুয়া আছে, দুয়াটি হলোঃ (رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ) (রব্বানা আতিনা ফিদ দুনইয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতে হাসানাহ ওয়া কিনা আযাবান্নার)। উভয় রুকনের মাঝে উল্লেখিত দুয়াটি পড়তে হবে। রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার সুযোগ হলে (بِسْمِ الله اَللهُ أَكْبَرُ) (বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার) বলে ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করতে হবে। রুকনে বা হাতে চুমা খাওয়া যাবেনা এবং স্পর্শ করতে না পারলে ইশারা করতে হবেনা। হাজরে আসওয়াদ থেকে তওয়াফ শুরু করে আবার হাজরে আসওয়াদে আসলে এক তওয়াফ হয়। এভাবে সাত তওয়াফ বা চক্কর শেষ করে উভয় কাঁধ ঢেকে, মাকামে ইব্‌রাহীমের পিছনে (নামায পড়ার উপযুক্ত স্থান পেলে) দু রাকাত নামায পড়তে হবে। ভীরের কারণে সম্ভব না হলে মসজিদের যে কোন স্থানে পড়লেই চলবে।
(২) সায়ীঃ এখন সায়ী করার জন্য ছফা মারওয়া পাহাড়ে যেতে হবে। শুধু ছফাতে আরোহণের সময় এ আয়াতঃ (إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ الله) وَ أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِهِ ( ইন্নাছ ছফা অল মারওয়াতা মিন শায়া-ইরিল্লাহ) এবং(আবদায়ু বিমা বাদা আল্লাহু বিহ) পড়তে হবে। পাহাড়ে আরোহণ করে কিবলামুখী হয়ে, দুয়ার জন্য দু হাত উঠিয়ে ৩বারঃ (لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ)(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার) বলে নিম্নের দুয়াটিঃ
(لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كَلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ أَنْجَزَ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারীকালাহ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু,আনযাজা ওয়াদাহু,ওয়া নাসারা আবদাহু,ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহ্দাহু। তিনবার এ দুয়াটি ও মধ্যখানে অন্যান্য দুয়া পড়তে হবে। এখন মারওয়ার দিকে যেতে হবে। কিছুদূর গেলে দুটি সবুজ চিহ্ন পাওয়া যাবে। দু চিহ্নের মাঝে শুধু পুরুষদেরকে হালকা দৌড়াতে হবে। ছফা মারওয়াতে চলতে, কুরআন তেলাওয়াত ও যে কোন ধরণের দুয়া পড়া যায়। এ চলার সময় নির্ধারিত কোন দুয়া হাদীসে আসে নাই। মারওয়াতেও ছফার মতই কাজ, তবে এ আয়াতঃ (ইন্নাছ ছফা অল মারওয়াতা মিন শায়া-ইরিল্লাহ) এবং(আবদায়ু বিমা বাদা আল্লাহু বিহ) পড়তে হবে না। এভাবে ছফা ও মারওয়াতে ৭টি সায়ী করতে হবে। ছফা থেকে মারওয়াতে গেলে এক সায়ী হবে এবং মারওয়া থেকে ছফাতে আসলে দুটি সায়ী হবে। যাওয়া আসা নতুন সায়ী হবে।
(৩) মাথার চুল খাটো বা মুন্ডন করাঃ ছফা মারওয়াতে সায়ী শেষে মাথার সব চুল থেকে ছোট বা মুন্ডন করা উভয়টিই বৈধ। তবে মুন্ডন করাই উত্তম। কেননা মুন্ডন কারির জন্য আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন বার দুয়া করেছেন।(বুখারী১৭২৮,মুসলিম৩১৪৮) আর মহিলারা মাথার সমস্ত চুলের মাথা থেকে আঙ্গুলের এক গিরা পরিমান ছোট করবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
(১) নিষিদ্ধ কাজগুলোর কোন একটি স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে করলে ফিদ্‌ইয়া বা ক্ষতিপূরণ দিতে হবেঃ হারাম এলাকাতে একটি ছাগল যবেহ করতে হবে, অথবা ৬জন দরিদ্রকে খাওয়াতে হবে, অথবা ৩টি রোযা রাখতে হবে। (২) কুরআন ও হাদীসে এক সফরে একটি উমরার কথাই আসছে। আয়েশা মসজিদ থেকে ইহরাম বেঁধে বার বার উমরা করা ভিত্তিহীন। (৩) সায়ী শেষে কোন নামায নেই এবং উমরার কোন বিদায়ী তওয়াফও নেই।

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন

No comments found.

New comment